নিজস্ব প্রতিবেদকঃঃ
বরিশাল নগরীর সশস্ত্র সন্ত্রাস সেই আলামিনসহ তার ৪ সঙ্গীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। পুলিশ-সাংবাদিক ও নারীসহ অন্তত ১০জনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করার তিন মামলায় সোমবার আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেন। নগরীর পূর্ব-দক্ষিণাঞ্চলের সশস্ত্র বাহিনীপ্রধান আলামিনসহ তার সঙ্গীরা কারা অভ্যন্তরে যাওয়ার খবরে চাঁদমারীতে স্বস্তির আবহ বইছে। আলোচ্চ্য বাহিনীপ্রধান আলামিন নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিল মজিবর রহমানের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। এই বাহিনীর অন্যতম সদস্য ইমন কাউন্সিলরের ছোট ভাই।
পুলিশ জানায়- গত ৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যারাতে শহরের চাঁদমারী ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সম্মুখ সড়কে নগর বিশেষ শাখার সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) কাজী কামরুজ্জামান, স্থানীয় বাসিন্দা ব্যবসায়ীর স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪৮) এবং আঞ্চলিক একটি দৈনিকের সাংবাদিক জলিল আকনকে কুপিয়ে জখম করে আলামিনসহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা। এই ঘটনায় পুলিশ, সাংবাদিক ও ওই নারী সংশ্লিষ্ট কোতয়ালি মডেল থানায় তিন মামলা করেন বাহিনীপ্রধান আলামিনসহ অন্তত ৪০ থেকে ৪৫ জনের বিরুদ্ধে। মামলার পরপর পুলিশ অভিযান চালিয়ে এই ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেপ্তার করলেও আলামিন ও সিদ্দিক ওরফে সিঙ্গাপুর সিদ্দিকসহ মূলহোতারা ছিল ধরাছোয়ার বাইরে। বলা চলে ৯ সেপ্টেম্বর রাতের ঘটনার পর অনেকটা আত্মগোপনে চলে যায় বাহিনীপ্রধান আলামিনসহ সন্ত্রাসীরা।
এই আলামিন, সিদ্দিক, রাব্বি, হৃদয় ও রাব্বি সোমবার আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাওয়ার একদিন আগে আরেকটি সশস্ত্র সন্ত্রাসের জন্ম দেয়। ওই তিনটি মামলার একটির বাদী সাংবাদিক জলিল আকনকে রোববার রাতে চাঁদমারী এলাকায় প্রকাশে ফের কুপিয়েছে। এই ঘটনায়ও একটি মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কোতয়ালি থানা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে- জলিল আকনের এবারের মামলাটিও ৩২৬ ধারায় নথিভুক্ত হতে যাচ্ছে।
ফরিদা বেগমের স্ত্রীর মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে- আলামিনসহ বাহিনীর অপরাপর সদস্যরা তার স্বামী-সন্তানের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি করে আসছিলেন। এই চাঁদা না পেয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে বাহিনী নিয়ে সশস্ত্র হামলা চালায় আলামিনসহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়- স্থানীয় কাউন্সিলের ছত্রছায়ায় আলামিন পুরো চাঁদমারীসহ আশপাশ এলাকায় একটি সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলে। এই বাহিনী বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজিসহ ভবন মালিকদের নানাভাবে জিম্মি করে অর্থআদায় করে আসছিল। তাদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা হেনস্তার শিকার হয়েছেন। এমনকি তাদের অনেককে প্রকাশে বেইজ্জতি হতেও হয়েছে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ মুখ খুলছিল না।
কিন্তু ৯ সেপ্টেম্বর রাতে সন্ত্রাসের ঘটনা এতটাই যে আলোচিত হয়েছে, তাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ স্থানীয় সুশীলমহলও তাদের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ওই দিনের সন্ত্রাসের বিচারের দাবিতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা খোদ পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের সম্মুখে মানববন্ধন করে এবং পুলিশ কমিশনারকে স্মারকলিপিও দেন। এসময় পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর ভুমিকা রাখার প্রতিশ্রুতি দেন বলে জানা গেছে। পাশাপাশি মাঠপ্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।
একাধিক সূত্র জানায়- বাহিনীপ্রধান আলামিন পুলিশের কঠোরতার বিষয়টি আঁচ করতে পেরেই সোমবার আত্মসমর্পণে উদ্যোগী হয়। তার পক্ষে আদালতে আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস।
জানা গেছে- বাহিনীপ্রধান আলামিন কারাগারে যাওয়ার এই খবর চাঁদমারীতে ছড়িয়ে পড়ায় অনেকেই স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে যারা বিগত সময়ে তাদের হাতে নিপীড়িত হয়েছেন, এমন ব্যক্তি-বিশেষ এই ঘটনায় বেশমাত্রায় খুশি হয়েছেন।’