মোঃ রাতুল গাজী (নলছিটি-ঝালকাঠী)::
ঝালকাঠির নলছিটিতে সরকারি স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলন চলছে।০৬ অক্টোবর সোমবার থেকে হাসপাতালে চিকিৎসক পদায়ন সহ বারো দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার আন্দোলন নলছিটি।এতে অংশ নিয়েছেন নানান শ্রেনী পেশার মানুষ।প্রতিদিন সকাল ৯:৩০ মিনিট থেকে দিনব্যাপী এ কর্মসূচী পালন করছে ছাত্র জনতা।
তৃতীয় দিনে অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি তিন দিনে আন্দোলনের অগ্রগতি ও বিভিন্ন বিষয় গণমাধ্যমে তুলে ধরেন আন্দোলনকারীরা।
০৮ অক্টোবর বুধবার সকাল ১১ টায় নলছিটি প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন তারা।এসময় গত তিন দিনের আন্দোলনে জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সাথে হওয়া তাদের আলোচনার কথা তুলে ধরেন।
লিখিত প্রেফ ব্রিফিং পাঠ করেন মো:শাহাদাৎ ফকির,এসময় আন্দোলনের মূখ্য সংগঠক সাথী আক্তার,আব্দুর রাজ্জাক মাস্টার,ইমরান হোসেন,মারজান খান,সাইফুল ইসলাম,বালী তূর্য,রমজান,আবু মূসা,নাফিউল সহ অন্যান্য আন্দোলনকারীরাও উপস্থিত ছিলেন।
এসময় তারা জানান ঝালকাঠি জেলার সিভিল সার্জন ডা:হুমায়ূন কবির ইতোমধ্যে তাদের সাথে মুঠোফোনে আন্দোলনের বিষয় বিস্তারিত জানতে আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলেছেন,এছাড়াও কয়েক দফায় উপজেলা সাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা:শিউলি পারভীনের সাথেও আলোচনা হয়েছে বলে জানায় তারা।
আন্দোলনকারীরা জানান,সিভিল সার্জন ডা:হুমায়ূন কবির শারিরীকভাবে অসুস্থ হওয়ায় ছুটিতে আছেন বলে জানিয়েছেন।এবং আন্দোলনকারীদের দাবিগুলো সব মেনে নেয়ার মৌখিক আশ্বাস দিয়েছেন বলেও জানান।
কিন্তু আন্দোলনকারীরা বলেন,মৌখিকভাবে আশ্বস্ত করায় আমরা সিভিল সার্জনকে ধন্যবাদ জানাই কিন্তু আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নে তাদের রূপরেখা,সংস্কারে প্রয়োজনীয় সময় সম্পর্কে ধারনা দেয়া এবং হাসপাতালের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা সহ যেসকল ছোটখাটো সংস্কার এখনই বাস্তবায়ন করা সম্ভব সেগুলো করার আগ পর্যন্ত তাদের এই আন্দোলন চলমান থাকবে।
লিখিতভাবে তাদেরকে এই পত্র দেয়া না হলে এবং সংস্কারে দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নিলে পর্যায়ক্রমে কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারিও দেন তারা।
বক্তব্যে তারা সুনির্দিষ্টভাবে আন্দোলনের অগ্রগতি তুলে ধরে জানান,তাদের দাবিগুলো ছিলো-
১। যত দ্রুত সম্ভব সকল শূন্যপদে এমবিবিএস চিকিৎসক পদায়ন।
এই দাবির প্রেক্ষিতে তারা জানিয়েছেন, ৪৮ তম বিসিএস থেকে নিয়োগকৃত চিকিৎসকদের মধ্য থেকে তারা নলছিটি উপজেলার জন্য ৪-৫ জন চিকিৎসক পদায়নের জন্য চেষ্টা করবেন। যেটি এই অক্টোবরের শেষ নাগাদ সম্ভব হতে পারে।
২। বন্ধ থাকা অপারেশন থিয়েটার চালু করানো, অন্তত সপ্তাহে তিন দিন সিজারিয়ান সেকশন চালু করা।
এই দাবির প্রেক্ষিতে তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালেও দুইজন কনসালটেন্ট ও সার্জন সিজারিয়ানসহ মাইনর সার্জারি চালিয়ে যাচ্ছেন, নলছিটির জন্য আলাদা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না পেলেও সপ্তাহে অন্তত একদিন করে হলেও যাতে নলছিটি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের সেবা দেয়া যায় তার চেষ্টা করবেন। তবে এটির সম্ভাব্য দিন তারিখ জানাতে পারেননি।
৩। বন্ধ থাকা আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন চালু করা।
এটির প্রেক্ষিতে তারা জানিয়েছেন, নলছিটির জন্য আসা মেশিনটি এক বছর ওয়ারেন্টি পিরিয়ডের মধ্যে বিকল হওয়ায় সেটি মেরামতের জন্য ঢাকায় নেয়া হলেও সেটি আর সাড়ানো সম্ভব হয়নি। তবে এটির ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের সাথেও তারা আলাপ করেছেন যাতে যেভাবেই হোক এখানে বরাদ্দকৃত মেশিনটি বদলে নতুন মেশিন বুঝিয়ে দেয়া হয়। তবে চিকিৎসক পদায়নের আগ পর্যন্ত এটি চালু করা সম্ভব নয়। চিকিৎসক পদায়ন হলে তাকে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ শেষে আলট্রাসনোগ্রাম চালু করা সম্ভব।
৪। নতুন ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন বরাদ্দ আনানো।
এটির প্রেক্ষিতে তারা জানিয়েছেন, যে মেশিনটি চালু আছে সেটি পুরনো মডেলের হওয়ায় সেটি দ্বারা শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ জয়েন্ট ও পয়েন্টের এক্সরে সম্ভব না হওয়ায় তারা নতুন একটি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনের চাহিদা প্রেরন করবেন এবং আনার জন্য চেষ্টা করবেন, তবে এটির জন্য সম্ভাব্য সময় জানাতে পারেননি।
৫। প্যাথলজিতে রক্ত পরিসঞ্চালন, ডেঙ্গু, টাইফয়েড, সেরাম ক্রিয়িটিনিন, লিপিড প্রোফাইলসহ সকল টেস্ট চালু করা এবং রক্তের ক্লাবের অনুমোদন ও হাসপাতালে রুম বরাদ্দ দেয়া।
এটির প্রেক্ষিতে তারা জানিয়েছেন, HbsAg, HIV, HCV, Malaria এবং Syphilis এর কিট, ভাইরাস স্কানের কিট, ব্লাড ট্রান্সফিউশন ব্যাগ, এবং বায়োকেমিস্ট্রি সেমি-এনালাইজারটি নস্ট ও পরীক্ষাগুলোর জন্য রিয়াজেন্ট নেই। তাই এই মেশিনটি সচল করা বা নতুন আনানোর জন্য তারা চেষ্টা করবেন। পাশাপাশি রক্ত পরিসঞ্চালন চালু করতে হলে একজন মেডিকেল ল্যাব টেকনোলজিস্টও প্রয়োজন সেটিও শূন্য থাকায় এই পদেও লোক লাগবে সেটিও তারা চেষ্টা করবেন।
৬। লোড শেডিং বা প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য হাসপাতালে বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থা করা বা পুরো হাসপাতালে সোলার পাওয়ারিং করা।
এটির প্রেক্ষিতে তারা জানিয়েছেন, যেহেতু আইপিএস আপদকালীন সময় মোকাবেলায় পর্যাপ্ত নয় তাই তারাও সোলার পাওয়ারিং সিস্টেম চান এবং এ বিষয়ে জেলা সমন্বয় সভায় উত্তোলন করবেন এসময় আমরা তাদেরকে অনুরোধ করেছি যাতে স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে তারা সৌর বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্য বরাদ্দ চান এবং সমন্বয় করে জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারেন।
৭। অচল সব পানির ফিল্টার সচল করানো।
এটির প্রেক্ষিতে তারা জানিয়েছেন, সাধারণত রোগীর স্বজনরা বাইরের গভীর নলকূপ থেকে পানি পান করেন তাই এগুলো সাড়ানো হয়নি,তবে দ্রুতই সবগুলো ফিল্টার সচল করে দেবেন। এটি যত দ্রুত সম্ভব করা হবে।