অনলাইন ডেস্ক::
কোভিড-১৯ মহামারির প্রথম পর্যায়ে খামারিদের উৎপাদিত দুধ, ডিম, মাছ, মাংস গ্রুপভিত্তিক ভ্রাম্যমাণ টিম গঠন করে এবং ক্ষেত্র বিশেষে মন্ত্রণালয়াধীন দপ্তর-সংস্থার মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ জাতীয় পদক্ষেপ দেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
রোববার (০৯ মে) রাজধানীর সচিবালয়ে নিজ দপ্তর কক্ষে করোনা সংকটে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় গৃহীত কাযর্ক্রম ও সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। এসময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, করোনাকালে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। মানুষের পুষ্টি ও আমিষের প্রয়োজন মেটাতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দপ্তর কাজ করছে।
মন্ত্রী বলেন, গতবছর প্রায় ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকার পণ্য ভ্রাম্যমাণ ব্যবস্থায় বিক্রয় করা হয়েছে। এতে উৎপাদক ও খামারি এবং একইসাথে ভোক্তারা উপকৃত হয়েছে। এছাড়া করোনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের ক্ষতিগ্রস্ত ৪ লাখ খামারিকে ৫৫৪ কোটি টাকা নগদ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আরও ২ লাখ খামারিকে ২৯২ কোটি টাকা প্রণোদনা দেওয়া হবে। এটি যাচাই-বাছাই চলছে। এটি ঋণ নয়। ছোট ছোট প্রান্তিক খামারিরা যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সে জন্য এ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
এ সময় মন্ত্রী আরও বলেন, 'করোনায় সরকার ঘোষিত চলমান বিধি-নিষেধের মধ্যে অনেক দপ্তরের কাজ বন্ধ থাকলেও এসময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মৎস্য অধিদপ্তর ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে খামারিদের উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তর-সংস্থার কার্যক্রম বিশেষ করে সম্প্রসারণ, কৃত্রিম প্রজনন, টিকাদান, চিকিৎসা, পরামর্শ সেবা প্রদান এবং সরকারি খামারে রেনু-পোনা উৎপাদন ও সরবরাহ, হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর বাচ্চা উৎপাদন ও বণ্টন অব্যাহত রাখা হয়েছে।
অনলাইন-এসএমএস সার্ভিসের মাধ্যমে খামারিকে সেবা প্রদান এবং অনলাইনে আমদানি-রপ্তানির জন্য এনওসি এর আবেদন গ্রহণ ও অনুমোদন করে ওয়েবসাইটে প্রদান করা হচ্ছে। প্রাণিজ পণ্য আমদানি-রপ্তানি সচল রাখার জন্য এ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ল্যাব চালু রাখাসহ সব প্রকার পরীক্ষা ও পরিদর্শন কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'মন্ত্রণালয় গত ৫ এপ্রিল ২০২১ তারিখ থেকে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম এবং এগুলোর উৎপাদন সামগ্রীর সাপ্লাই চেইন নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য সমন্বয়ক হিসেবে কাজ শুরু করেছে। একারণে দেশের কোথাও দুধ, ডিম, মাছ, মাংসের সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই।
এবছরও ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এসব বিক্রয় কেন্দ্রে বাজার দামের চেয়ে কম দামে ন্যায্যমূলে দুধ, ডিম, মাছ, মাংস বিক্রি হচ্ছে। এসব পণ্য কিনতে অসাধু ব্যক্তি বা মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের হাতে যাতে মানুষ জিম্মি হয়ে না পড়ে সে জন্য ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় ব্যবস্থায় গরুর মাংস প্রতি কেজি ৫০০ টাকা, খাসীর মাংস প্রতি কেজি ৭০০ টাকা, সোনালী মুরগি প্রতি কেজি ২১০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১২০ টাকা, ডিম প্রতিটি ৬ টাকা এবং প্যাকেট দুধ প্রতি লিটার ৬০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
এ ব্যবস্থায় সারা দেশে এ পর্যন্ত ২২৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকার পণ্য বিক্রয় হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিশেষভাবে প্রণীত কর্মপরিকল্পনা এবং এর সফল বাস্তবায়নের ফলে করোনার এ অতিমারির মধ্যেও মাছ, মাংস, দুধ, ডিম এর উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন অব্যাহত রয়েছে এবং এগুলোর বাজারমূল্য স্থিতিশীল রয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিষম্পদ খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৮০ লাখ মানুষ জড়িত। সে মানুষগুলো যাতে করোনায় কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, বেকার হয়ে না পড়ে সেজন্য মন্ত্রণালয় এসব কাজ বাস্তবায়ন করছে।'
করোনা ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, 'ভ্যাকসিনের সাময়িক সমস্যা হলেও ইতোমধ্যে সরকার যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে থেকে ভ্যাকসিন আনার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এসব দেশ থেকে আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে করোনা ভ্যাকসিন পেয়ে যাবো। আশা করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাদুকরী নেতৃত্ব ও সেরা কূটনীতির কারণে বাংলাদেশের একজন মানুষও করোনার ভ্যাকসিনহীন থাকবে না।'
এসময় করোনা সংকটেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তথ্যের অবাধ প্রবাহকে সকল মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান মন্ত্রী।