রেদোয়ান আহম্মেদ::
বরিশালের মুলাদী উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অ্যাসাইনমেন্ট সিন্ডিকেটের তথ্য পাওয়া গেছে। অনেক অভিবাবক অভিযোগ করছেন এ বিষয়ে। আবার অনেকে করছেন না কারন তার অ্যাসাইনমেন্ট এর জন্য সরকার নির্ধারিত কোন ফি আছে কিনা এব্যাপারে অবগত নয়। গতবছরের নভেম্বর মাসে শিক্ষার্থীদের শিখনফল মূল্যায়নের অ্যাসাইনমেন্ট নেওয়ার জন্য কোনো ফি আদায় করা যাবে না বলে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সাবধান করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অভিযুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। এসময় মাউশি পরিচালক (মাধ্যমিক) মো. বেলাল বলেন, শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া ও জমা নেওয়ার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান কোনো ধরনের ফি নিতে পারবে না। ফি আদায়ের জন্য প্রতিষ্ঠানের নানাবিধ প্রচলিত খাত আছে। করোনা সংক্রমণের মধ্যে এমনিতে অভিভাবকরা দিশাহারা। আর্থিক সংকটে অনেক অভিভাবক নিয়মিত টিউশন ফি পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছেন। এর মধ্যে যদি অ্যাসাইনমেন্টের নামে ফি আদায় করে প্রতিষ্ঠান, এটা অন্যায়। কোনোভাবেই এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে ছাড় দেওয়া হবে না। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে গতবছর ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই ছুটি এখনো বলবৎ রয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রমের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট করানোর নির্দেশ দিয়েছে মাউশি। সে অনুযায়ী সপ্তাহে একদিন প্রতিষ্ঠান থেকে অ্যাসাইনমেন্ট টপিক সংগ্রহ ও জমা দেবে শিক্ষার্থীরা। সাম্প্রতিক সময় এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট প্রদান সংক্রান্ত নোটিশ দেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, এটিকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে বাড়তি অর্থ আদায় করছে মুলাদী উপজেলার কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এব্যাপারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করে যানা যায় কিছু সংখ্যক বিদ্যালয়ে অ্যাসাইনমেন্টের জন্য টাকা নেয়া হয় না। তবে অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলো অ্যাসাইনমেন্ট বাবদ টাকা নিচ্ছে। কিছু বিদ্যালয় রিতিমত ব্যাবসা শুরু করে দিয়েছে ৬ষ্ঠ শ্রেনি থেকে ১০ম শ্রেনি পর্যন্ত বিষয় প্রতি ৬০ টাকা এবং এসএসসি পরীক্ষার্থীদের থেকে বিষয় প্রতি ১৫০ টাকা নেয়া হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী এক করনা মহামারীর কারনে টাকার জোগার করতে না পারায় অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম থেকে ছিটকে পড়ছে। অভিভাবকগন প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের সন্তানদের বিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়া হবে এবং পরিক্ষায় ফেল করানো হবে বলে হুমকি দিচ্ছেন শিক্ষক কর্মচারীগণ। বিজলী বার্তা থেকে কোন বিদ্যালয়ের সম্মান হানী ঘটানো আমাদের উদ্দেশ্যে নয়। অভিযোগটি অসাধু শিক্ষক কর্মচারীদের দিকে বিদ্যালয় গুলোর দিকে নয়। আসুন এবার একটা হিসেব মেলানোর চেষ্টা করি এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিষয় প্রতি ১৫০ টাকা নেয়া হচ্ছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের এফোর সাইজের ৭টি কাগজ দিচ্ছেন। ৭টি কাগজের বাজার মূল্য ৭টাকা, একটি প্রশ্নের জন্য ৩টাকা এবং কভার পৃষ্ঠার জন্য ৩টাকা। তাহলে মোট খরচ দাড়ালো ১৩টাকা। এছাড়া অন্যান্য খরচ বাবদ আরও ৫টাকা ধরলাম অর্থাৎ ১৮টাকা। বাকি থাকে ১৫০-১৮= ১৩২টাকা। ঐ শ্রেনিতে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ৭০জন হলে, প্রতি বিষয় প্রতি টাকা অবশিষ্ট থাকে ১৩২×৭০ = ৯২৪০টাকা। এই ৯২৪০টাকা কোথায় যাচ্ছে? এই প্রশ্ন সবার মাথায় আসতে পারে। এই টাকাটি মূলত শিক্ষক কর্মচারীর পকেটে যাচ্ছে। এটাতো মাত্র একটা বিষয়ের অ্যাসাইনমেন্ট বাবদ নেয়া হচ্ছে তাহলে ভাবুন মোট বিষয়ে কত টাকা নেয়া হয়। যেসব বিদ্যালয় থেকে অ্যাসাইনমেন্ট বাবদ টাকা নেয়া হচ্ছে তার কিছু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে প্রশ্ন করলে এব্যাপারে মূল কথা এড়িয়ে যান। অভিবাবকদের একটাই প্রশ্ন শিক্ষক কর্মচারীরা আর কতদিন এভাবে অভিবাবকদের পকেট কাটবেনা?