ডেক্স রিপোর্ট: আসন্ন ঈদ উল আযাহায় বরিশাল বিভাগ জুড়ে প্রায় পাঁচ লক্ষ গবাদি পশু কোরবানীর সম্ভাব্য লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর। যার মধ্যে ৬০ ভাগ গবাদি পশু আসবে বরিশাল বিভাগের খামারীদের কাছ থেকে। এছাড়া আশপাশের জেলা থেকে আসবে আরো ২০ ভাগ পশু। তবে ঈদ উল আযহা’র পূর্বে এ লক্ষমাত্র আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. কানাই লাল স্বর্ণকার।
প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানাগেছে, ২০১৮ সালে ঈদ উল আযহা উপলক্ষ্যে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় সর্বোমোট ৪ লক্ষ ৮০ হাজার ৩৬৫টি গবাদি পশু জবাই হয়। যার মধ্যে বরিশাল জেলায় ১ লাখ ২৬ হাজার ৭৫৮টি, ভোলা জেলায় ১ লাখ ১০ হাজার ৩১৯টি, পটুয়াখালী জেলায় ১ লাখ ২০ হাজার ২টি, ঝালকাঠি জেলায় ৫০ হাজার ২৯০টি, পিরোজপুর জেলায় ৪৯ হাজার ৩২৬টি ও বরগুনা জেলায় ৪৮ হাজার ৩৬৫টি।
এদিকে আসন্ন ঈদ উল আযহায় বরিশাল বিভাগে কোরবানী’র পশুর চাহিদা বৃদ্ধিপাবে বলে মনে করছেন প্রাণিসম্পদ দপ্তর। পূর্বের হিসবা মতে এবার ২ থেকে ৩ ভাগ পশুর চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। তবে সেটা বর্তমান অর্থনীতি এবং পরিবেশেষের উপর নির্ভর করছে। অর্থনীতি স্থিতিশিল এবং ভারতীয় পশুর আধিপত্ত না থাকলে পশু বিক্রিও লাভজনক হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বছর বছর কোরবানীর পশুর চাহিদা বৃদ্ধি পেলেও সে তুলনায় বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলে খামারী এবং পশুর সংখ্যা তেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে না। ফলে এবছরও পশুর ঘাটতি পুরণে পাশর্^বর্তী জেলাগুলোর উপর নির্ভরশিল হতে হবে। কেননা বর্তমানে চাহিদার তুলনায় প্রায় দুই লাখ পশু কম রয়েছে এই বিভাগে।
বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক ডা. কানাই লাল স্বর্ণকার বলেন, ঈদ উল আযাহায় কোরবানীর পশু’র সিংহভাগ আসে খামারীদের কাছ থেকে। এছাড়া ঘরোয়া ভাবে অনেকে কোরবানীর পশু বিক্রি করে থাকে। সে থেকে প্রায় ২০ ভাগ পশু কোরবানী হয়। বাকি ২০ ভাগ বিভাগের বাইরের জেলা থেকে আসছে।
তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বরিশাল বিভাগে মোট ১৫ হাজার ১৪৪ জন গবাদি পশু হৃষ্টপুষ্টকরণ খামারী রয়েছেন। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি জুলাই মাস পর্যন্ত এদের খামারে সর্বমোট ৮৭ হাজার ১৫৩ টি পশু রয়েছে। যার মধ্যে ষাড়ের সংখ্যা ৩৮ হাজার ৫২৪টি, বদল এর সংখ্যা ১৫ হাজার ৫৩৬টি, গাভি/বকনা’র সংখ্যা ১১ হাজার ৮৫৪টি, মহিষ ১ হাজার ৮০১টি, ছাগল ১৭ হাজার ৭৬৫টি, ভেড়া ৬৫৬টি এবং অন্যান্য পশুর সংখ্যা আরো ১৭টি।
এর মধ্যে বরিশাল জেলায় ২০ হাজার ৮৯৬টি, পিরোজপুর জেলায় ৯ হাজার ২৯৭টি, পটুয়াখালী জেলায় ১৯ হাজার ৫০১টি, বরগুনা জেলায় ৭ হাজার ৮৯৫টি, ঝালকাঠি জেলায় ৩ হাজার ১১৮টি এবং ভোলা জেলায় জবাই উপযোগী গবাদি পশুর সংখ্যা ২৬ হাজার ৪৪৬টি।
বরিশাল সদর উপজেলার চাঁদপুরা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও বাখালী এগ্রো ফার্ম এর সত্ত্বাধিকারী জাহিদুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, গত ৩ বছর পূর্বে আমরা ১০/১২ জন বন্ধু মিলে এই ফার্মটি চালু করি। বর্তমানে ফার্মে ২২টি গরু রয়েছে। যা এবারের কোরবানী’র হাটে উঠানো হবে।
তিনি বলেন, এক একটি গুরু হৃষ্ট-পুষ্ট করতে তিন থেকে চার মাস সময় লেগে যায়। খাবার, কর্মচারীর বেতন এবং চিকিৎসা সহ এর পেছনে অনেক অর্থ ব্যয় হয়। কিন্তু যখন হাটে উঠানো হয় তখন প্রকৃত মূল্য পাওয়া যায় না। মাঝখান থেকে মধ্যসত্বভোগীরা লাভবান হয়। তারা বাইরের জেলা থেকে গরু এনে তা বিক্রি করে। আর কোন কোন ক্ষেত্রে ভারতীয় পশু কোরবানীর হাটে ঢুকে পড়লে আমাদেরমত স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত দেয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
প্রাণিসম্পদ বিভাগীয় উপ-পরিচালক ডা. কানাই লাল স্বর্ণকার বলেন, প্রতি বছর ঈদ উল আযহা’র পরে জবাইকৃত গবাদি পশুর পরিসংখ্যান করে থাকে। সে হিসেবে দেখা যায় বিভাগে প্রতি বছর ২ থেকে ৩ ভাগ পশু বেশি জবাই হয়ে থাকে। এবার অর্থনৈতিক অবস্থা এবং পরিবেশ ভালো থাকলে গত বছরের তুলনায় কোরবানীর পশুর চাহিদা বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, বরিশালে খামারীরা যে পরিমান পশু হৃষ্ট-পুষ্ট করে থাকেন তাতেই সম্ভব এই অঞ্চলে কোরবানীর পশুর চাহিদা মেটানো। কিন্তু কোরবানী আসলে কিছু মৌসুমী ব্যবসায়ী পশু এনে তা হাটে বিক্রি করে। এতে প্রকৃত খামারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফলে মূল্য না পেয়ে খামারীরা পশু হৃষ্ট-পুষ্টকরণ এবং পশু উৎপাদনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
তিনি আরো বলেন, বরিশালে গবাদি পশুর খামারের দিকে মানুষের আগ্রহ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বিষয়ে আমাদের দপ্তর প্রতিনিয়ত উঠান বৈঠক করে থাকি। যার কারনে গত ৫ বছরে এ অঞ্চলে গবাদি পশুর খামার অনেকাংশে বেড়ে গেছে। তাছাড়া বর্তমানে দেশে গবাদি পশুর চাহিদা নেই। পরিসংখ্যা অনুযায়ী চাহিদার তুলনায় পাঁচ লক্ষাধিক পশু বেশি রয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে স্থানীয় খামারীদের গবাদি পশু দিয়েই বরিশাল অঞ্চলের পশুর চাহিদা পুরন করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।