বিজলী ডেস্ক::
‘মাটি ও পানিঃ জীবনের উৎস’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ জেলা প্রশাসন এবং মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউট (এসআরডিআই) এর আয়োজনে ‘বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস’ পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে আজ সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়। র্যালি শেষে জেলা রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অংশীজনদের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভার শুরুতে কৃষি ও মৃত্তিকা সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের চলমান নানান কার্যক্রম ও ভূমিকার তথ্যসম্বলিত একটি সংক্ষিপ্ত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের পর সভার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউটের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সানজিদা আখতার। তাঁর উপস্থাপনায় টেকসই কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থা অর্জনে মাটির গুরুত্বের পাশাপাশি বাংলাদেশে ক্রমহ্রাসমান চাষযোগ্য জমির বিপরীতে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির বাস্তবতায় এদেশে মৃত্তিকা সম্পদ অবক্ষয়ের নানাবিধ কারণ ও ফলাফলের ওপর আলোকপাত করা হয়। এছাড়াও ২০৫০ সাল নাগাদ প্রায় ৯৩০ কোটি মানুষের খাবারের যোগান নিশ্চিত করার বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে যেখানে মাটিই ৯৫ ভাগ খাদ্যের উৎস, সেখানে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩৪ শতাংশ মাটি অবক্ষয়ের শিকার হয়ে চলেছে। ফলে ভবিষ্যতে পৃথিবীর প্রায় ৩২০ কোটি মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হওয়ার আশঙ্কার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোও উঠে এসেছে।
সভায় আমন্ত্রিত কৃষক প্রতিনিধি হিসেবে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের বায়লাখালী গ্রামের কৃষক সুমন আহমেদ তাঁর বক্তব্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ফসল উৎপাদনে আমাদের দেশের মাটির উপযোগিতা, বরিশাল অঞ্চলে কৃষির উন্নয়নে সাম্প্রতিক অগ্রগতির প্রেক্ষিতে অদূর ভবিষ্যতে বরিশাল থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে সবজি বিপণনের আশাপ্রকাশ করেন। তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ বক্তব্যে ভারত, মোজাম্বিক ও এসওয়াতিনি (সাবেক সোয়াজিল্যান্ড) থেকে বাংলাদেশে আগত দুটি উচ্চফলনশীল পেঁপের জাত, ভারতীয় ‘শাহী’ এবং ‘কাশ্মীরি’ পেঁপের বাণিজ্যিক উৎপাদনের সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরেন।
এছাড়াও সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. গোলাম কিবরিয়া, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ মুরাদুল হাসান এবং সভাপতি ও মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ কে এম আমিনুল ইসলাম আকন এবং বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মনদীপ ঘরাই। তাঁদের বক্তব্যে আমাদের দেশের মাটিতে জৈব পদার্থ ক্রমাগত হ্রাস পাওয়ার ফলে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারে সৃষ্ট বিষাক্ততা, বিশেষ করে পললভূমিতে উক্ত দূষণের দীর্ঘস্থায়ী কুপ্রভাব এবং তানিরসনে কৃষিকাজে সার্বিকভাবে জৈব সার ব্যবহার বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ, এ লক্ষ্যে চলমান আমন ধান কাটার মৌসুমে ধানের গোড়ায় (নাড়া) অন্তত ছয় ইঞ্চি রেখে ধান কাটার জন্য কৃষকদের প্রতি নির্দেশনাসহ কৃষি সংক্রান্ত বিষয়ে নিজেদের বিবেকের সর্বোচ্চ প্রয়োগের মতো নানান গুরুত্ববহ প্রসঙ্গ উঠে আসে এবং আজকের বিশ্ব মৃত্তিকা দিবসটি যে শুধু কৃষি-সংশ্লিষ্টদের জন্যই নয় বরং আমাদের সবার জন্যই প্রাসঙ্গিক-এই বিষয়টি মনে রাখার আহ্বান জানানো হয়।