বিজলী অনলাইন ডেক্স:
সন্ধ্যা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ১০ কিলোমিটার এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। নদীভাঙন প্রতিরোধে গত বছর খননকাজ শুরু করেছিল পাউবো। ১২ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের অধীনে এ কাজ শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু পাউবোর কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে ওই প্রকল্পের কাজ এখন বন্ধ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। এতে সন্ধ্যা নদীতে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। নদীতে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, উজিরপুর উপজেলার বুক চিরে বয়ে গেছে সন্ধ্যা নদী। দীর্ঘ ছয়–সাত বছর ধরে সন্ধ্যা নদীর অব্যাহত ভাঙনে উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের দাসেরহাট, কমলাপুর, আশোয়ার, চৌধুরীর হাট, কালিরবাজার বেড়িবাঁধ, শিকারপুরসহ প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এই সময় নদীভাঙনে উজিরপুরের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে রৈভদ্রাদী, দাসেরহাট, হানুয়া, আশোয়ার গ্রামের বিশাল অংশ। টাকার অঙ্কে নদীভাঙনে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
নদীভাঙন অব্যাহত থাকায় ঝুঁকিতে পড়েছে নারীকেলী, চতলবাড়িসহ প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকার হাটবাজার, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদসহ জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা ও নদীভাঙন রোধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কার্যালয়ে আবেদন করেন।
এ বিষয়ে পাউবোর বরিশাল কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, সন্ধ্যা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য ২০১৮ সালে পাউবো ‘চতলবাড়ি বাজার ও স্কুল–কলেজ রক্ষা প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেন। প্রকল্পটি অনুমোদনে বিলম্ব হওয়ায় ভাঙন ঠেকাতে রাজস্ব খাত থেকে ২০১৯ সালে জরুরি ভিত্তিতে পাউবোর খুলনা কার্যালয়ে উজিরপুরের নারিকেলী-চতলবাড়ি রক্ষা প্রকল্প’ নামে ১২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় সন্ধ্যা নদীর উজিরপুর নারিকেলী-চতলবাড়ি এলাকার লস্করপুরের ২ কিলোমিটার চর খনন করে নদীর গতি পথ পরিবর্তন ও নদীর স্রোতোধারা পরিবর্তন করে ভাঙন রোধ করার কথা ছিল। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই খনন কাজের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সাংসদ মো. শাহে আলম। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ওই কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু গত প্রায় এক বছরে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ফলে প্রকল্পের লক্ষ্য পূরণ হবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, সন্ধ্যা নদীর লস্করপুর এলাকায় একটি বড় ড্রেজার এবং পাশেই পাউবোর লঞ্চ। খননকাজের যন্ত্রপাতি ও পাইপ পড়ে আছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে খনন কার্যক্রম বন্ধ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে লস্করপুর এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, নদী খননের কাজ বন্ধ থাকায় ওই প্রকল্পের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা নদীর মধ্যে অলস সময় পার করছেন।
বড়াকোঠা ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হারুন অর রশিদ অভিযোগ করে বলেন, ‘নদী খননকাজে নিয়োজিত কর্মকর্তারা এক বছর ধরে নামে মাত্র খননকাজ করেছেন। মাঝেমধ্যে কিছু খনন করে বালু ব্যবসায়ীদের কাছে বালু বিক্রি করে দিয়েছেন। তাঁরা প্রায়ই যান্ত্রিক ত্রুটির কথা বলে খননকাজ বন্ধ রেখেছেন। এভাবে চললে পাঁচ বছরেও প্রকল্প কাজ শেষ হবে না। এ ব্যাপারে পাউবোর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে আমরা অভিযোগ করেছি। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’
নারিকেলী-চতলবাড়ি রক্ষা প্রকল্প তদারকি কাজে নিয়োজিত পাউবো খুলনার ড্রেজার বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান কাজে গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় খননকাজ শেষের পথে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কার্যক্রম কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে।