আজ ১ সেপ্টেম্বর। বিএনপির ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রতিষ্ঠার পর এখন কঠিন সময় পার করছে দলটি। এরই মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুই বছরের বেশি সময় কারাভোগ করে জামিনে মুক্ত হয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে চিকিৎসাধীন। দলের ওপর দেশী-বিদেশী চক্রান্ত, অব্যাহত চাপ, শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের ওপর অবর্ণনীয় হামলা, মামলা, গ্রেফতার, জুলুম-নির্যাতনের কারণে সাংগঠনিক দুর্বলতা বেড়েছে মতানৈক্য। সংগঠিত আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থতা, নির্বাচনে ভরাডুবি, নতুন-পুরোনো জোটে অসন্তোষ, সিদ্ধান্ত গ্রহণে অপরিপক্কতার কারণে বিএনপি অনেকটাই কোণঠাসা। প্রতিষ্ঠার পর বিএনপি এখন সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। এই অবস্থায় ৪২বছর পূর্ণ করে ৪২-এ পদার্পণ করেছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক পৃথক বাণীতে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশবাসীকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। মির্জা ফখরুল বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এদেশের মানুষকে একদলীয় দুঃশাসনের অন্ধকার যুগ থেকে রক্ষার জন্য বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। বারবার দেশ ও গণতন্ত্রের সঙ্কটকালে অসীম সাহসিকতার সাথে জুলুম-নির্যাতনকে সহ্য করেও দুর্বার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, বর্তমান দুঃসময়ে জনগণকে সংগঠিত করার কোন বিকল্প নেই। দেশ আজ দুঃশাসন কবলিত। এর ওপর করোনা মহামারীর আক্রমণে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আতঙ্ক ও ভয়ের মধ্যে দিনাতিপাত করছে দেশের মানুষ। গুম-খুনের আতঙ্ক মানুষের নিত্য সঙ্গী। আইন, বিচার, প্রশাসনকে সরকার কব্জার মধ্যে রাখার চেষ্টায় মরিয়া। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বেআইনী কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে সমাজে দেখা দিয়েছে বিপজ্জনক বিশৃঙ্খলা। খুন-খারাবী, নারী-শিশু নির্যাতন, অপহরণ, গুপ্তহত্যা ইত্যাদি অনাচারের মাত্রা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ সরকার যেখানে জনগণের প্রতিপক্ষ সেখানে মানুষের জানমালের কোন নিরাপত্তা থাকতে পারে না। সুতরাং জনগণের নিরাপত্তা বিধানের জন্যই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
৪ বার ক্ষমতায় ও দুইবার বিরোধী দলে থাকা এই দলটি বিভিন্ন সময় নানা বাধা-বিপত্তির মুখেও পড়েছে। তবে সংগঠনের বিস্তৃতি থেমে থাকেনি, বেড়েছে জনসমর্থনও। সরকারের দমন-পীড়নে নেতা-কর্মীদের ওপর মিথ্যা মামলার হিড়িক ও গ্রেফতার, নিখোঁজ বা গুম ঘটনায় সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে ঢিমেতালে।
বিএনপি প্রতিষ্ঠার আগে ১৯৭৭ সালে জুন মাসে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯ দফা কর্মসূচি নিয়ে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগো দল) গঠন করেন। ওই দলের আহবায়ক হয়েছিলেন বিচারপতি আব্দুস সাত্তার। এরপর জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট গঠন করে জিয়াউর রহমান ওই বছরে প্রত্যক্ষ ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। জাগো দল, ন্যাপ (মশিউর রহমান যাদু মিয়া), ইউনাটেড পিপলস পার্টি (ক্যাপ্টেন আব্দুল হালিম-কর্নেল আকরর হোসেন), লেবার পার্টি (মতিন) ও মুসলিম লীগ (শাহ আজিজুর রহমান) নিয়ে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানে নেতৃত্বে ৩১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়, যাতে বিচারপতি আব্দুস সাত্তার, মশিউর রহমান যাদু মিয়া, শাহ আজিজুর রহমান, প্রফেসর ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, এস এ বারী, ক্যাপ্টেন (অব.) আব্দুল হালিম, জামাল উদ্দিন আহমেদ, মেজর জেনারেল (অব.) মাজেদ-উল হক, ক্যাপ্টেন (অব.) নুরুল হক, ব্যাস্টিার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার আবুল হাসনাত, এম সাইফুর রহমান, মাওলানা আব্দুল মতিন, কর্নেল (অব.) আসম মোস্তাফিজুর রহমান, লে. কর্নেল (অব.) আকবর হোসেন, আতাউদ্দিন খান প্রমূখ নেতা ছিলেন।
১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তোলা হয়। দলের ১১ সদস্যের স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়।
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে একদল বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে নিহত হন দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। এরপর প্রায় ৯ বছর গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে গৃহবধূ থেকে দেশনেত্রীতে পরিণত হন বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তিনি হন দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী। এরপর আরও দুইবার নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। তবে ১/১১-এর সেনা সমর্থিত সরকারের শাসনামল থেকে একটানা সাড়ে ১২বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। তবে ২০১৮ সালের ৩০ডিসেম্বরের নির্বাচনে দলটি অংশ নিলেও ভূমিধ্বস পরাজয় হয়। এরপর থেকেই দলপুনর্গঠনের কাজে হাত দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিভিন্ন জেলা কমিটির সাথে সাথে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনেও আনছেন নতুন নেতৃত
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিএনপির কর্মসূচি: বিএনপির ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকাল ১১টায় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী শেরেবাংলা নগরস্থ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। বেলা সাড়ে ৩টায় বিএনপি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।#