সোমবার, ১২ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বিকাল ৩:০৩
শিরোনাম :

মিয়ানমারের এই করুণ পরিণতির শেষ কোথায়?

অনলাইন ডেস্ক::

অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল গোটা মিয়ানমার। পুলিশি নিষেধাজ্ঞা আর জান্তা সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে প্রতিদিনই রাস্তায় নামছেন সাধারণ মানুষ। বিক্ষোভ দমাতে কঠোর অবস্থানে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। গণতন্ত্রের দাবিতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে পুলিশের নির্বিচারে গুলিবর্ষণে প্রায় প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা।

গণতন্ত্রের দাবিতে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে মিয়ানমারজুড়ে অব্যাহত রয়েছে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ। প্রথমদিকে পুলিশি বাধা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ চলতে থাকলেও, সময় যতই গড়ায় বাড়তে থাকে বিক্ষোভের তীব্রতা। এমনকি আন্দোলনে পুলিশ কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও যোগ দেয়ার খবর এসেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। যদিও, একপর্যায়ে হার্ডলাইনে যায় জান্তা সরকার।

বিক্ষোভ দমনে পুলিশের নির্বিচারে গুলি আর টিয়ার শেলে প্রায় প্রতিদিনই রণক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে মিয়ানমারের একেকটি প্রধান শহর। তবে, এতেও দমানো যাচ্ছে না বিক্ষোভকারীদের। জীবন বাজি রেখে শত নিষেধাজ্ঞা আর সেনাবাহিনীর চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে জান্তা সরকারবিরোধী আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন বিক্ষোভকারীরা।

তবে, গণতন্ত্রের দাবিতে বুক চিতিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে গেলেও ২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যার সময় এসব বিক্ষোভকারীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে। বিশ্লেষক ও সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, যখন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী জাতিগত নিধন অভিযান পরিচালনা করল, গ্রামের পর গ্রাম আগুনে জ্বালিয়ে দিল, হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু হত্যা করল এবং লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য করা হলো, কোথায় ছিলেন এই বিক্ষোভকারীরা?

শুধু তাই নয়, অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে নির্বিচারে গুলিবর্ষণের বিরুদ্ধে ক্রমেই সোচ্চার হচ্ছে বিশ্ব সম্প্রদায়। মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে আসছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞা জারির ঘোষণাও। এতে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে সে সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরব ভূমিকা নিয়েও।

জনসমর্থন আদায়ের কৌশল হিসেবে ১৯৬২ সালে ক্ষমতা দখল করা সামরিক জান্তা সরকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে ঘৃণা ছড়ায়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালে ‘সন্ত্রাসবাদ’ দমনের নামে জাতিগত নিধন শুরু করে সেনাবাহিনী, যা পরবর্তীতে পরিচিতি পায় গণহত্যা নামে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকের পাশাপাশি বিভিন্ন মহলের অনেকেই মনে করেন, মিয়ানমারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ এবং গণতন্ত্রপন্থি, উভয়েরই অবস্থান রোহিঙ্গা গণহত্যার পক্ষে। দেশটির ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চির সমর্থকরা দাবি করেন, সে সময় তার অন্য কোনো উপায় ছিল না। ক্ষমতাশালী সামরিক বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ করা ছিল তার জন্য অসম্ভব। রোহিঙ্গা গণহত্যার বিরোধিতা করলে, সামরিক বাহিনী তার ওপর চড়াও হতো বলেও মনে করেন বেশির ভাগ সু চি সমর্থক। যদিও সামরিক জান্তাকে খুশি করার কৌশল যে খুব একটা কাজে আসেনি, তা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে।

তবে, বর্তমান অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ নিয়ে আরও প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নানা মহলে। আর সেটি হলো, ক্ষমতার একটু ভাগ পেতে গণতন্ত্রকামী এই আন্দোলন কতটুকু মূল্য দিতে রাজি আছে? যেখানে জেনারেলদের দ্বারা রচিত সংবিধানে পার্লামেন্টের এক চতুর্থাংশ আসন সামরিক বাহিনীর জন্য সংরক্ষিত, সেখানে মিয়ানমারের চলমান সংকটময় পরিস্থিতিতে সমঝোতা অনিবার্য। বিশ্লেষকদের মতে, এখানে সম্ভবত দুটো পথ খোলা, সামরিক জান্তার সঙ্গে পথচলা অথবা সামরিক শাসন মেনে নেওয়া। সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কাছে যেখানে এই দুইয়ের খুব একটা পার্থক্য নেই। আর তাই রোহিঙ্গাদের পক্ষে না দাঁড়ানোর কৌশল গণতন্ত্রকামী আন্দোলনকে কেবল দুর্বলই করেছে।

তবে, অভ্যুত্থানবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে সম্প্রতি জান্তা সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারী এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে নতুন করে সম্পর্ক স্থাপনের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের অনেকেই অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন। রোহিঙ্গাদের প্রতি গণতন্ত্রকামীদের দৃষ্টিভঙ্গিও বদলাতে শুরু করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। গণতন্ত্র ও রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে ট্রেড ইউনিয়নগুলোও অংশ নিতে শুরু করেছে।

এখন দেখার বিষয় এসব পদক্ষেপ একটি আন্দোলনকে যথাযথ রূপ দিতে পারে কি না।

সবাইকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা