রবিবার, ১১ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ১০:৫৪
শিরোনাম :

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড: জাতি হিসেবে আমরা কি দায় এড়াতে পারি?

অনলাইন ডেস্ক::

ব্রিটিশ অভিযাত্রী স্যার আর্নেস্ট শ্যাকেলটন দক্ষিণ মেরু থেকে ফিরে এসে বলেছিলেন, মৃত সিংহের চেয়ে জীবিত গাধা ভালো। কিন্তু কিছু কিছু মানুষ থাকে ব্যতিক্রম তারা যতদিন বাঁচে সিংহের মতোই বাঁচে। পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যিনি শত্রুর রাইফেলের সামনে দাঁড়িয়ে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা না করে দোর্দণ্ড প্রতাপের সঙ্গে বলেছিলেন, তোরা কী চাস, কোথায় নিয়ে যাবি আমাকে? তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

পরিবারের সব সদস্যসহ বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ৪৪ বছর পর বিগত ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো প্রশ্ন করেন, এত বড় সংগঠন, এত নেতা কোথায় ছিল? মাঝেমধ্যে আমার এটা জানতে ইচ্ছে করে।

ততোদিনে তিনি জাতির পিতার হত্যার বিচার করেছেন, আওয়ামী লীগকে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলে পূর্ণতা দিয়েছেন কিন্তু যে প্রশ্ন তিনি করেছিলেন তার সদুত্তর কি কেউ দিতে পারবেন?

শুনতে কিছুটা রূঢ় লাগলেও দল হিসেবে কিংবা আরও বিস্তৃতভাবে চিন্তা করলে জাতি হিসেবে আমাদের কিছুটা আত্মবিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে। যে মানুষটি অকপটে বলেছিলেন তিনি নিজের দেশ ও দেশের জনগণকে পরিবারের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন, যিনি জীবনের ৪ হাজার ৬৮২ দিন শুধু কারাগারেই ছিলেন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে, যিনি কিছুটা আপস করলে হতে পারতেন অখণ্ড পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কিন্তু বেছে নিয়েছিলেন বাংলার মানুষকে, যিনি নিজের দেশের মানুষকে বিশ্বাস করতেন অন্ধভাবে তাকে প্রায় পরিবারের সব সদস্যসহ নির্মম-নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো অভ্যন্তরীণ শত্রুদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ এবং বহিঃশত্রুদের ছত্রছায়ায়- এ দায় কি জাতি হিসেবে আমরা এড়াতে পারি?

পৃথিবীর ইতিহাসে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের চিত্রগুলোর দিকে তাকালে আরও পরিষ্কার হয়ে ওঠে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড নিছকই রাজনৈতিক ছিল না। রোমান সাম্রাজ্যের সেনাপতি জুলিয়াস সিজার, যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন কিংবা ভারতের স্বাধীকার আন্দোলনের নেতা মহাত্মা গান্ধীসহ সব রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডই অত্যন্ত মর্মান্তিক এবং হৃদয়বিদারক। কিন্তু এদের কারও পরিবারই আক্রান্ত হয়নি। যেখানে রেহাই পায়নি বঙ্গবন্ধুর দশ বছরের শিশু সন্তান কিংবা তার গর্ভবতী পুত্রবধূও। ঘাতকেরা শুধু দৈহিকভাবেই জাতির পিতাকে হত্যা করে ক্ষান্ত হয়নি তার আদর্শ এবং দর্শনকে মুছে ফেলতে চেয়েছিল চিরতরে। কিন্তু প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনাই আজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করে কিছুটা হলেও জাতি হিসেবে আমাদের দায়মুক্তি দেওয়ার জন্য। আজও অনেক নেতা সারাদেশে কিন্তু জাতির পিতার সত্যিকারের আদর্শকে ধারন করে কতজন?

লেখক, প্রকৌশলী ও সমাজকর্মী

সবাইকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা