শনিবার, ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ২:৫২
শিরোনাম :

আ.লীগের টিকিট কারা পাচ্ছেন, জানা যেতে পারে রোববার

বিজলী অনলাইন ডেক্স:

পাঁচটি আসনের উপনির্বাচনে ১৪১ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তাঁদের মধ্যে কে পাচ্ছেন দলের মনোনয়ন, তা কাল রোববার ঠিক হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে কাল রোববার বিকেলে বসছে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা। করোনার কারণে সীমিত সংখ্যায় সদস্যদের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বাকিদের মতামত নেওয়া হবে ফোনে।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এই তথ্য জানা গেছে। সূত্র বলছে, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থা, সাংগঠনিক চ্যানেল ও নিজস্ব সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। সম্ভাব্য দলীয় প্রার্থী কারা হতে পারেন, এই বিষয়ে প্রায় সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেছেন। কাল দলের নেতাদের মতামত নিয়ে তালিকা চূড়ান্ত করে ঘোষণা হয়ে যেতে পারে।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, দলের সভাপতি ও বোর্ডের প্রধান শেখ হাসিনা ছাড়া আর পাঁচজনকে বৈঠকে ডাকার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। এঁরা হলেন—আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ওবায়দুল কাদের, আবদুর রাজ্জাক ও ফারুক খান। বৈঠকে কারা উপস্থিত হবেন সে বিষয়ে জানিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে দিয়েছেন দলীয় প্রধান।

পাবনা-৪ আসনে ভোট হবে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর। সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ওরফে ডিলুর মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়েছিল।

ঢাকা-৫ এবং নওগাঁ-৬ আসনে ভোট হবে ১৭ই অক্টোবর। ঢাকা-৫ আসনের সাংসদ ছিলেন আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান মোল্লা। নওগাঁ-৬ এর প্রয়াত সাংসদ আওয়ামী লীগের ইসরাফিল আলম।

নির্বাচন কমিশন এই দুটি আসনে ভোটের তারিখ ঘোষণা করেনি। তবে আওয়ামী লীগ পাঁচটি আসনেই দলীয় প্রার্থী বাছাই করার লক্ষ্যে ফরম বিক্রি করেছে। প্রতিটির দাম ৩০ হাজার টাকা।

সব মিলিয়ে ১৪১ জন আগ্রহী পাওয়া গেছে। অর্থাৎ প্রতি আসনে গড়ে আগ্রহী প্রার্থী ২৮ জন। ঢাকা-১৮ আসনে সর্বোচ্চ ৫৬ এবং সিরাজগঞ্জ-১ এ সর্বনিম্ন তিনজন দলীয় ফরম সংগ্রহ করেন।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা জয়ী হন। বাকি ১৪৭ আসনের প্রতিটিতে গড়ে ১৭ জন দলীয় ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে প্রতি আসনের বিপরীতে ১৪ জন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। অর্থাৎ এবার সাম্প্রতিক কালে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী আগ্রহ দেখিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, পাঁচটি আসনের সবগুলোর প্রার্থী এখনই বাছাই করা হবে নাকি প্রথম তিনটির প্রার্থী বাছাই হবে—এটি নিয়ে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে দলের নীতিনির্ধারকদের। কেউ কেউ বলছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সব আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলে দলীয় কোন্দল বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এ ছাড়া প্রার্থীর পক্ষে আচরণবিধি লংঘনসহ নানা অনিয়ম হতে পারে।

দলীয় সূত্র জানায়, ঢাকার দুটি আসন এবং পাবনা-৪ আসন নিয়ে দলীয় নীতিনির্ধারকেরা কিছুটা চিন্তিত। কারণ, ঢাকা-৫ ও পাবনা-৪ আসনে প্রয়াত সাংসদদের পরিবার মনোনয়নের সবচেয়ে বড় দাবিদার। কিন্তু তাদের নিয়ে দল দ্বিধাবিভক্ত। আবার পরিবারের বাইরে যারা চাইছেন, তাঁরাও এতটা শক্তিশালী প্রার্থী নন। এ অবস্থায় গোয়েন্দা এবং অন্যান্য জরিপে এগিয়ে থাকা দলীয় নেতাদের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু উপনির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কী না, তা স্পষ্ট নয়। এ জন্যে সাংসদদের পরিবারের বাইরে গিয়ে প্রার্থী বাছাইয়ের চেষ্টা থাকবে।

সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ পাবনা-৪ আসনের পাঁচবারের সাংসদ ছিলেন। এবার এই আসনে দলীয় ফরম সংগ্রহ করেছেন ২৮ জন। এর মধ্যে তাঁর স্ত্রী-সন্তান, মেয়ের জামাইসহ স্বজনই ছয়জন। অন্যদিকে ঢাকা-৫ আসনে হাবিবুর রহমান মোল্লা পাঁচবারের সাংসদ। ছেলে মশিউর রহমান মোল্লা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহম্মেদ মান্নাফীর মনোনয়ন সংগ্রহের ফলে কি হতে যাচ্ছে, তা আঁচ করতে পারছেন না দলের নেতা-কর্মীরা। এই আসনে দলের ফরম সংগ্রহ করেছেন ২০ জন।

ঢাকা-১৮ আসনে ২০০৮ সাল থেকে টানা সাংসদ ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাহারা খাতুন। মন্ত্রীও হয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুল প্রার্থী হতে পারেন-সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন প্রচারে প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা বেড়ে যায়। যদিও পুতুলের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো পর্যায়ের নেতারাই ওয়াকিবহাল নন। গত জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত আওয়ামী লীগের কিছু কেন্দ্রীয় নেতার নামও আলোচনায় আসে। স্থানীয় নাকি বাইরের; ব্যবসায়ী নাকি রাজনীতিক; সাহারা খাতুনের পরিবারের নাকি অন্য কেউ-এসব প্রশ্নও সামনে এসেছে এ আসনে। ফলে আগ্রহী প্রার্থীও বেশি, সর্বোচ্চ ৫৬ জন।

সিরাজগঞ্জে মনোনয়ন মোহাম্মদ নাসিমের পরিবারেই থাকছে। তবে কে, এটা একটা আলোচনার বিষয়। কারণ, নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয়ের পাশাপাশি তাঁর চাচাতো ভাই শেহরীন সেলিমও দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে নাসিমের সঙ্গে সেহরীনের বাবা মোহাম্মদ সেলিমের মনোনয়ন লড়াই জাতীয় রাজনীতিতেই আলোচিত ঘটনা ছিল। সেলিম আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীরও সদস্য ছিলেন। কিন্তু মনোনয়ন লড়াইয়ে সব সময় নাসিমই জয়ী হয়েছেন। এবারও নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিলেরই মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এক-এগারোর পর আইনি জটিলতায় নাসিম প্রার্থী হতে পারেননি। ২০০৮ সালের ভোটে তানভীর শাকিল বাবার আসনে সাংসদ হয়েছিলেন। অন্যদিকে শেহরীন বিদেশে থাকেন। ফলে তানভীর শাকিলের সম্ভাবনাই বেশি দেখছেন দলের নেতারা।

সবাইকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা