বিজলী ডেক্সঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে উপজেলা যুবলীগের একটি মিছিল থেকে মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয় হেফাজতে ইসলাম ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে গত দুদিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ইতিমধ্যে ওই মিছিলের পর হেফাজত ও যুবলীগের মধ্যে ফেসবুকে পক্ষে ও বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি বাকযুদ্ধ শুরু হওয়ায় পরিস্থিতি ক্রমশই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।
জানা গেছে, গত সোমবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণে বাধা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে উপজেলা যুবলীগ সদরে একটি বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। যুবলীগের ওই মিছিল থেকে জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ‘নবীনগরে মৌলবাদীদের ঠাঁই নেই’ বলে স্লোগান দেয় যুবলীগ নেতাকর্মীরা।
এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে হেফাজতে ইসলামের উপজেলাসহ সভাপতি ও ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় সদস্য মাওলানা মেহেদী হাসান তার ফেসবুকে ‘সাধু সাবধান’ বলে যুবলীগের বিরুদ্ধে একটি আপত্তিকর পোস্ট দেয়। ওই পোস্টের পরই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন যুবলীগ নেতারা।
এরপর থেকে গত দুদিন ধরে যুবলীগের নেতারা তাদের স্ব স্ব ফেসবুকে ওই নেতাকে চারদলীয় জোটের সাবেক ‘সুবিধাবাদী নেতা’ আখ্যা দিয়ে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে একাধিক পোস্ট দেন। এরপরই দুপক্ষের মধ্যে পরিস্থিতি ক্রমশ উত্বপ্ত হতে থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক পর্যবেক্ষক এ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘সংস্কৃতি ও শান্তির শহর খ্যাত নবীনগরে যুবলীগ ও হেফাজতের এমন পাল্টাপাল্টি বাকযুদ্ধের পর গত দুদিন ধরে আওয়ামী লীগের এমপিসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দের ‘নিশ্চুপ’ থাকাটা রহস্যজনক। আমরা কোনোভাবেই এটি মেনে নিতে পারছি না। তাই পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।’
এ বিষয়ে হেফাজত নেতা মাওলানা মেহেদী হাসান বলেন, ‘নবীনগরের মাটিতে মৌলবাদীদের ঠাঁই নেই’ বলে যারা প্রকাশ্যে স্লোগান দেয়, তারা মূলত ইসলাম বিরোধী। কেননা, নবীজীর আদর্শের লোকদেরকেই মূলত মৌলবাদী বলা হয়। তাই মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে যারা আপত্তিকর স্লোগান দিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে চায়, তাদেরকে তৌহিদী জনতা যেকোনো মূল্যে প্রতিরোধ করবেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘মৌলবাদী না বলে যদি জঙ্গিবাদের ঠাঁই নেই বলা হতো, তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না। এরপরও আমরা এমপির দিকে তাকিয়ে এখনো শান্ত আছি।’
এদিকে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম রিপন বলেন, ‘মাওলানা মেহেদীরা কখনো চার দলীয় জোটে কখনো মহাজোটে অবস্থান বদলায়। এরা সুবিধাবাদী। আর আমাদেরই (ক্ষমতাসীন) কারো কারো মদদে এরা যুবলীগকেও হুমকি দেওয়ার এমন দুঃসাহস দেখায়।’
তিনি আরো বলেন, তবে মৌলবাদীদের এমন হুমকির ঘটনা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে জানানোর পরও, কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় আমরা মূলত হতাশ!
এ বিষয়ে নবীনগরের সাংসদ এবাদুল করিম বুলবুলের সঙ্গে বারবার কথা বলার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেয়া যায়নি।
তবে নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের তিন তিনবারের সাধারণ সম্পাদক এম এ হালিম আজ বুধবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঘটনাটি আমার জানা নেই। আপনার (সাংবাদিক) কাছ থেকেই প্রথম এটি শুনলাম। তবে ঘটনা সত্য হলে, সেটি খুবই দুঃখজনক। তাই বিষয়টির খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’