অনলাইন ডেস্ক::
টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে করোনা মহামারিতেও চলতি বছর অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো থাকবে এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর। তার মধ্যে মহামারি সামাল দিতে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশে রপ্তানির গতি বাড়ায় মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিও দ্রুত বাড়বে জানিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
বুধবার (২৮ এপ্রিল) ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশিত এডিবির এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট রিপোর্টে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৪৫টি দেশ ২০২১ সালে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসে এ তথ্য জানায় এডিবি।
এদিকে, দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৯ শতাংশ। করোনায় ভারত বিপর্যস্ত হলেও ২০২১ সালে দেশটির ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে তারা। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ায় এশিয়া থেকে আমদানি বাড়বে এ অঞ্চলের অর্থনীতি তাই ইতিবাচক অবস্থায় থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এডিবি কর্তৃপক্ষ।
সকালে ব্রিফিংয়ে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ বলেন, তবে এ প্রবৃদ্ধি নির্ভর করবে করোনার দ্বিতীয় ঢেওয়ের উপর।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সরকারের দেওয়া প্রণোদনার সুফল মেলার পাশাপাশি বিশ্ব বাণিজ্য এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পেতে পারে।
এডিবির প্রতিবেদেনে বলা হয়েছে, বিশ্ব অর্থনীতির টেকসই পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি বাংলাদেশের রপ্তানি ও আমদানির গতি বাড়লে আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৭ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রেমিটেন্সের শক্তিশালী প্রবাহ অব্যাহত থাকায় ব্যক্তিখাতে ভোগব্যয় বাড়বে। বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশের উন্নতি হলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগেও গতি আসবে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও মহামারির বাস্তবতায় পরে তা ৭ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। মহামারির ধাক্কায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসে, যা আগের অর্থবছরে ৮ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও ধীরে ধীরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির শক্তিশালী ধারায় ফিরবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অঞ্চল হিসাবে এ বছর দক্ষিণ এশিয়ার পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া হবে সবচেয়ে দ্রুত। ২০২০ সালে যেখানে এ অঞ্চলের অর্থনীতি ৬ শতাংশ সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল, এবার তা ৯ দশমিক ৫ শতাংশ হারে বাড়বে।
এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় দেশ ভারত যদিও মহামারিতে নাজুক অবস্থার আছে। তারপরও এ বছর সেখানে ১১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার কথা বলেছে এডিবি। গত বছর ভারতের অর্থনীতি ৮ শতাংশ সংকুচিত হয়েছিল।
এডিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ ইয়াসুকি সোয়াদা বলেন, ভারত যে গতিতে টিকাদান চালিয়ে নিচ্ছে, তাতে আগস্টের মধ্যে সেখানে ৩০ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে ২০২২ সালেই হয়ত ভারত ‘হার্ড ইমিউনিটিতে’ পৌঁছে যাবে।
এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঘুরে দাঁড়ানোর গতি যতটা হবে বলে আগে ভাবা হয়েছিল, এ বছর তার চেয়ে বেশি হবে বলেই এডিবির ধারণা।
এডিবি এটাও মনে করে যে তবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নতুন করে বাড়লে এবং টিকাদানের গতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়ানো না গেলে অঞ্চলিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি বাড়ানো কঠিন হবে।