বিজলী ডেক্স: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করনো পরিস্থিতিতে মানুষের দুর্ভোগ, অর্থ–কষ্টের উল্লেখ করে বলেছেন, প্রত্যেকটা জায়গায় মানুষের কষ্টটা দূর করাটাই লক্ষ্য। সেটাই চাই। এত বেশি মানুষ, হয়তো অনেক বেশি দিতে পারবো না। কিন্তু, কিঞ্চিত পরিমাণ দিলেও যেন দিতে পারি, কেউ যেন বঞ্চিত না হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৫০ লাখ পরিবারের প্রত্যেককে আড়াই হাজার করে টাকা নগদ অর্থ প্রদান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রদত্ত ভাষণে এই ঘোষণা দেন।
ধান কাটায় কৃষকদের সাহায্য করায় ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী লীগ নেতারা ধান কাটায় সাহায্য করায় আজ সারা বাংলাদেশের কৃষকের গোলাভরা ধান। শেখ হাসিনা বলেন, প্রচুর খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছে। আল্লাহর রহমতে, অন্তত খাদ্যের কষ্ট হবে না। সেটা আমরা ব্যবস্থা করতে পারব। কিছু নগদ সাহায্য দেয়া একান্ত অপরিহার্য। আমরা সেটুকু ব্যবস্থা করছি।তিনি বলেন, ‘সেইসঙ্গে যারা এখন বেকার আছেন, তারা কিছু কিছু কাজ করতে পারেন। যেখানে জমিজমা আছে একটা কিছু চাষাবাদ করা, একটু কাজ করা। নিজেও উদ্যোক্তা হয়ে একটু কাজ করেন। নিজে আর্থিকভাবে যেমন আপনারা দাঁড়াতে পারেন বিভিন্ন কাজ করে (এসব কাজ) দেশেরও সহায়তা হতে পারে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ফসল তোলার সময় আমাদের যে সমস্যাটা ছিল, যোগাযোগ ব্যবস্থাটা বন্ধ। তারপর আমরা যখন উদ্যোগ নিলাম, আমাদের প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পদক্ষেপ নিল। কিন্তু সেখানেও লোকবলের অভাব ছিল। তিনি বলেন, ‘আমি প্রথমে আমাদের ছাত্রলীগকে আহ্বান জানালাম। যে যেখানে আছে, তাদের নিজের এলাকা-সব জায়গায় তাদের নামতে হবে এবং ধানকাটায় কৃষকের পাশে দাঁড়াতে হবে।”মনে রাখতে হবে ধান থেকে চাল হয়। আর এ চাল থেকে কিন্তু ভাত হয়। আমাদের মূল খাদ্য। কাজেই সেই কাজ করতে লজ্জার কিছু নেই, তা গর্বের বিষয়। আমরা যেটা খেয়ে জীবন বাঁচাই, সেই জায়গায় শ্রম দেব না-এই দৈন্যতা যেন কারও মনে না থাকে’- যোগ করেন সরকারপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ‘এন-৯৫ ‘ সম্পর্কেও কথা বলেন এবং এটি সাধারণের জন্য নয় বরং করোনা রোগীকে যারা সেবা প্রদান করবে তাঁদের পরিধানের জন্যই দেওয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন।এছাড়া ঘরে সংক্রমণ মুক্ত পরিবেশে থাকলে তিনি মুখের পরিধেয় মাস্ক খুলে রাখার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
দুই বিশেষায়িত ব্যাংককে ২৫০০ কোটি টাকা:
শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে কর্মহীন হয়ে পড়া লোকজন এবং বিদেশ ফেরত জনগণ যাতে স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারেন, সেজন্য, কর্মসংস্থান ব্যাংকে ২ হাজার কোটি এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে ৫শ’ কোটি টাকা আমানত হিসেবে দেবে সরকার।
একই অনুষ্ঠান থেকে তিনি অনলাইন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের ২০১৯ সালের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ কার্যক্রমের ও উদ্বোধন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কর্মসংস্থান ব্যাংকের ঋণ প্রদান বৃদ্ধি করার জন্য আরও ২ হাজার কোটি টাকার বিশেষ আমানত দেয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘যুবক শ্রেণীকে যাতে বেকার হয়ে ঘুরে না বেড়াতে হয় সেজন্য সেখান থেকে তারা ঋণ নিতে পারবে। নিজেরা ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারবে।’
প্রবাসীদের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের যারা প্রবাসী, তারা রেমিট্যান্স পাঠায়। তাদের যেন ঘরবাড়ি বিক্রি করে, ঋণ নিয়ে বিদেশে যেতে না হয়, তার জন্য প্রবাসী কল্যাণ নামে আরেকটি বিশেষায়িত ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেই ব্যাংকেও আমরা আরও টাকা দেব। সেখানে আমরা অতিরিক্ত ৫০০ কোটি টাকা দেব। এর আগে ওখানে আমরা প্রায় ৪০০ কোটি টাকা দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন, এখন প্রবাসে কাজের পরিধি সীমিত হয়ে গেছে। সেখানেও বহু মানুষ কাজ হারাচ্ছে এবং অনেকে দেশে ফিরে আসছে। তারা আমার দেশের নাগরিক। তারা ওখানে কষ্ট করুক সেটা আমি চাই না। তারা ফিরে আসলে ফিরে আসবে। কিন্তু এখানে এসে তারা যেন কাজ করে খেতে পারেন, তাদের সেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাটা আমরা করে দিচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি যখন প্রথমবার সরকারে আসেন তখন দেশের যুব সমাজের বেকারত্বের অভিশাপ দূর করার জন্যই এই কর্মসংস্থান ব্যাংক সৃষ্টি করেন। এ ব্যাংক থেকে শিক্ষিত হোক আর অশিক্ষিত হোক, যেকোনো যুবক বা তরুণ-তরুণী কোনো জামানত ছাড়াই স্বল্প সুদে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারেন।’ ‘এই ঋণ নিয়ে তারা একা ব্যবসা করতে পারেন অথবা বন্ধু-বান্ধব মিলে ব্যবসা করতে পারেন,’ যোগ করেন তিনি।
ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড.আহমদ কায়কাউস। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সংযুক্ত হয়ে শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।