অনলাইন ডেস্ক::
ক্যারিবীয়রা যোদ্ধা। গৌরবময় ক্রিকেট ইতিহাস আছে তাদের। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেসব স্মৃতি এখন ধূসর। ক্রিকেট বিশ্বে টিকে থাকাই তাদের কাছে চ্যালেঞ্জের মতো। খেলোয়াড়দের ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধাও দিতে পারে না উইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড। তবুও সুদিন ফেরানোর স্বপ্ন নিয়ে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ান তারা। সে স্বপ্নের পালে হাওয়া দিয়েছে, চট্টগ্রাম টেস্টে কাইল মেয়ার্স-ক্রেইগ ব্রাথওয়েটদের কীর্তি। তাইতো ক্যারিবীয় ক্রিকেট নিয়ে নতুন করে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন ইয়ন বিশপ-ক্লাইভ লয়েডরা।
ক্যারিবীয় সমুদ্রে জোয়ার আসে, ভাঁটা আসে। বহু আগেই প্রলয়ে ভেঙেছে রূপালি জাহাজ। জোড়াতালি দিয়ে পাল তুলে রাখার সে কি প্রাণপণ চেষ্টা। বীরত্বের ইতিহাস কিংবা কিংবদন্তিদের গল্পে ঠাসা দ্বীপপুঞ্জের উপন্যাস। তাতে জ্বলজ্বল করে ক্লাইভ লয়েড, গ্যারি সোবার্স, ভিভ রিচার্ডস, জোয়েল গার্নার, ব্রায়ান লারা, ম্যালকম মার্শাল, কোর্টনি ওয়ালশ, কার্টলি অ্যামব্রোসদের বীরত্বগাঁথা।
বার্বাডোজের বালিয়াড়িতে পূর্বসূরিদের ছবি আঁকা ছেলেটার বয়স পেরিয়ে গেছে ২৮ বছর। ক্রিকেট অভিষেকের হিসেবে একেবারে কম নয়। তবুও সমুদ্রের ঘ্রাণ পেলেই রক্ত হয়ে ওঠে চঞ্চল। চট্টগ্রাম বন্দরেও ক্যারিবিয়ান সি’য়ের সংগ্রামের গল্পটাই বলে গেলো কাইল মেয়ার্সের ব্যাট। অবিশ্বাস্য জয়ের পর মেয়ার্স-বোনাররাই এখন দ্বীপের নায়ক।
সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপ বলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের জন্য এই অর্জন বিশেষ। অনেক সিনিয়র ক্রিকেটার ছিলো না। কিন্তু তারাও যে দৃঢ়চেতা, সেটা প্রমাণ করেছে। কাইল মেয়ার্স, এনক্রুমা বনারদের সম্পর্কে যা’ই বলি, কম বলা হবে। প্রত্যেকেই প্রশংসার দাবি রাখে।
ক্রিকেট বোর্ডের অর্থ সংকট, বর্ণবাদ সহ কতো আঘাত সহ্য করতে হয়েছে বছরের পর বছর। বিশ্বব্যাপী ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের প্রবর্তনে আর্থিকভাবে সুদিন দেখেছেন অনেকে। কিন্তু, আইপিএল-বিগ ব্যাশে খেলা অনেকেরই জাতির প্রতি নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রথম দুই আসরের চ্যাম্পিয়নদের শেষ দেখে ফেলেছেন অনেকে। কিন্তু, কখনও ক্রিস গেইল, কখনও ড্যারেন স্যামি কিংবা কার্লোস ব্রাথওয়েটরা নতুন করে স্বপ্ন দেখিয়েছেন। ২০১২ বা ১৬’র টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের সঙ্গে তুলনায় না গেলেও, চট্টগ্রাম টেস্ট জয়ের মাহাত্ম্য ক্যারিবীয়দের কাছে নিছক কম নয়।
সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপ আরও বলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের মানুষ বহু বছর ধরে এমনটাই আশা করে আসছে। ক্রিকেটাররা অসম্ভব কিছু জয় করে দেখাবে- এই গল্পটাই তারা করতে চেয়েছে সবসময়। করোনার কারণে ক্যারিবীয়দের জীবনও বিপর্যস্ত। আমার মনে হয়, ক্রেইগ ব্রাথওয়েট আর ফিল সিমন্সের এই দলটা তাদের মধ্যে এই বিশ্বাস আরও গাঢ় করেছে যে, কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।
ফিল সিমন্স গুরুগম্ভীর মানুষ। ম্যাচ শেষে ড্রেসিংরুমে দলকে সাধুবাদ জানাতে গিয়ে তাই উচ্ছ্বাসে ভেসে যাননি। ক্লাইভ লয়েডের খোলা চিঠির মতোই সরল ভাষায় বলে গেছেন, প্রাউড অব ইউ বয়েস।